এমডি আল মাসুম খান: বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চলীয় অঞ্চলের খুলনা রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তি যুগের পর যুগ অবৈধ দখলদারদের দখলে। উল্লেখ্য জমি দখল করে গড়ে উঠেছে নিয়ম বহির্ভূত স্থাপনা ও বাড়ি-ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে যে সকল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, তা নিজ দায়িত্বে অপসারণের জন্য গত ৫ হইতে ১০ ডিসেম্বরের নির্দেশ দিয়েছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত চূড়ান্ত নোটিসের তারিখের ডেড লাইন শেষ হয়ে গেছে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। তবে রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযান ও নিজস্ব জমি উদ্ধারে কোনো ক্রাশ প্রোগ্রাম নিতে দেখা যায়নি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের খুলনা জেলা ও বিভাগীয় রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কার্যালয়ের তো প্রাপ্ত কর্মকর্তা -কর্মচারীদের। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও বেদখল হওয়া ভূমি উদ্ধারে দায়িত্বহীনতার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বেদখল হওয়া ভূমি উদ্ধারে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তার পেছনে রয়েছে দুর্নীতি। দখলবাজদের কাছ থেকে মাসিক কিংবা বাৎসরিক উৎকোচ গ্রহণ করতেই হাতছাড়া হচ্ছে হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি। অবৈধ ভাবে দখলকৃত সম্পত্তির মধ্যে খুলনা বৈকালী জংশনে অবৈধভাবে দখলে রাখা জমিতে গড়ে উঠেছে সেমিপাকা, পাকা আবার কোথাও দ্বিতল ভবন।
খুলনা রেলওয়ের সম্পত্তি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, খুলনা জংশনে বেদখল থাকা জমিতে ১০৪ টি সেমিপাকা, পাকা, দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। রেলওয়ের জরিপের হিসাব মতে যার সরকারি আর্থিক মূল্য ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। নথিতে অবৈধ দখলদারদের নাম ঠিকানা সব তথ্য থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়না।
খুলনা রেলওয়ে ভূসম্পত্তি কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালে হালনাগাদ করা একটি তথ্য বিবরণী থেকে জানা যায়, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল খুলনা জেলার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৪১৩.১৮ একর। যার মধ্যে পরিচালিত কাজে ব্যবহার করা হয় প্রায় ৪৬৪.৪ একর জমি। যেখানে বেদখল জমির পরিমাণ ৭৬.০৫ একর। রেলের লিজে দেয়া কৃষি লাইসেন্সকৃত মোট জমির পরিমাণ ১৯৪.৯৪ একর। বাণিজ্যিক লাইসেন্সকৃত জমির পরিমাণ ১৬.৮৯ একর এবং মৎস্য চাষ জমির পরিমাণ ২১.৪৬ একর। রেলের লিজে নার্সারি জমির পরিমাণ ০.৬৯৫৯একর। অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ৬১৫.৮২ একর।
খুলনা বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় মোট ১৯ টি স্টেশন রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেদখল থাকা স্টেশনগুলোর মধ্যে রুপসা স্টেশনে ১৩৩.৩৬ একরের মধ্যে ১৫.৩৬ একর, রুপসা মংলা ৬.৫০ একর, সামন্তসেনায় ৬২.১১ একরের মধ্যে ৬.৬০ একর, বাহিরদিয়ায় ৬২.১৪ একরের মধ্যে ৫.৮০ একর, কর্নপুর ২৫.৮৮ একরের মধ্যে৩.৫৫ একর, বাগেরহাট কলেজ স্টেশনে ৩১.৭৭ একরের মধ্যে ৪.১৩ একর, ষাটগম্বুজ ৩.৯৯ একর, তালতলার হাট ৩.৬৬ একর, শিরোমণি ৩.০৪ একর, দৌলতপুর ২.৫২ একর এবং খুলনা ও খুলনা জংশনে ৯.১৫ একর। দৌলতপর ও দৌলতপুর কলেজ স্টেশনের বেদখল হওয়া সম্পত্তির পরিমাণ ৩.৩২ একর।
খুলনা রেলেওয়ের বেদখল জমির খুলনা ও খুলনা জংশনে রয়েছে ৯.১৫ একর। অবৈধ ভাবে দখলে রাখা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ০.৩৫৮৫ একর, বিআইডব্লিউটিসি ০.৭৪১৯ একর, যাতে বিআইডব্লিউটিসির পরিত্যক্ত অফিস ভবন রয়েছে। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ০.৫৪৮০ একর, ফেরিঘাট বাস টার্মিনাল ১.০৩০ একর, খুলনা মটর বাস মালিক সমিতি ০.৪৮২০ একর।
খুলনা জংশনের বেদখল ৭.৫৬ একর জায়গার পুরোটাই দখলে দেখেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রতি বছর কোরবানির ঈদে গরুর হাট বসে। অবৈধ বেদখল জমি গুলো নিয়ে রেলওয়ে এবং দখলে থাকা কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে বছরের পর বছর মামলা চলমান। খুলনা রেলওয়ে বেদখল হওয়া জমির পরিমাণ ৭৬.০৫ একর। এর মধ্যে খুলনা ও খুলনা জংশনে রয়েছে ৯.১৫ একর। বেদখল এসব জমির পুরোটাই সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে। অন্যান্য রেল স্টেশনের জমির সিংহভাগই ব্যক্তি পর্যায়ে দখলে রয়েছে।
এদিকে দৌলতপর রেল স্টেশন এবং দৌলতপুর কলেজ স্টেশনের বেদখল হওয়া সম্পত্তির পরিমাণ ৩.৩২ একর। বেদখল থাকা এ সম্পত্তির প্রায় পুরোটাই স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। দখলকৃত জমিতে সেমিপাকা, কোথাও পাকা আবার কোথাও দ্বিতল ভবন তৈরি করে করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন করা হয়েছে। প্রভাবশালীরা আবার এগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে।
খুলনা রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সব কিছু জানার পরও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। খুলনা রেলের জমির পরিমাণ ৬১৬ একর, যা রেলের কোন কাজেই ব্যবহৃত হয় না। এসব জমির অধিকাংশ রয়েছে রুপসা, মংলা স্টেশনে। উল্লেখিত স্থানে জমির পরিমাণ মংলায় ২৬৪ একর। এছাড়া রুপসায় ৭০ একর, যাত্রাপুরে ৫৯ একর, খুলনা জংশনে ২৭ একর জমি পতিত হিসেবে রয়েছে। অন্যান্য রেল স্টেশন গুলোতেও রয়েছে পতিত জমি। এসব জমিতেও গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। বেদখল হওয়া জমিগুলো উদ্ধারে রেলওয়ের দৃশ্যমান তেমন কোন উদ্যোগ নেই। বছরের পর বছর মামলা চলমান। মামলার মাধ্যমে কোন জমি উদ্ধার হয়েছে এমন কোন তথ্য খুলনা রেলওয়ের কাছে পাওয়া যায়নি।
গত ২৪ ডিসেম্বর খুলনা রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ থেকে অবৈধ ভাবে দখলে রাখা রেলের সম্পত্তি ছেড়ে দিতে মাইকিং করা হয়, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এমন ঘোষণার পরও অবৈধ দখলে থাকা সম্পত্তি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়নি কোন দখলদার। চূড়ান্ত সময়সীমা অতিবাহিত হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোন কঠোর পদক্ষেপও দেখা যায়নি।