এমডি আল মাসুম খান: চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টার খেতের জমিতে বিষ প্রয়োগে বিভিন্ন প্রজাতির শেয়াল, গন্ধগোকুল, বেজি, পোষা কুকুরসহ বহু বন্যপ্রাণী হত্যা করেছেন ফারুক হোসেন নামের এক কৃষক। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গতকাল রোববার সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা ইউনিয়ানের দীননাথপুর গ্রামের নড়িতলামাঠে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, এ ঘটনায় রোববার রাতে খুলনা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত সংরক্ষক বিভাগের ফরেস্ট গার্ড বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা বন বিভাগের কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামের মসজিদ পাড়ার নবী ছদ্দিনের ছেলে ফারুক হোসেন দীর্ঘ দিন ধরে দীননাথপুর গ্রামের নড়িতলা মাঠে বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। এবার তিনি জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। এই মাঠে বণ্য প্রাণীর অবাধ চলাচল রয়েছে। তার ভুট্টাখেত দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী চলাচল করে। প্রাণীগুলো ফসল নষ্ট করছে এমন কথা চিন্তা করে ক্ষিপ্ত হয়ে খাবারের সঙ্গে নিষিদ্ধ ফুরাডন বিষ দিয়ে মাঠের বিভিন্ন স্থানে রাখেন। বেশ কিছু দিন ধরে বন্যপ্রাণী গুলো খাবার খেয়ে মারা যেতে থাকে। একেএকে মারা যায় শেয়াল, গন্ধগোকুল, বেজি, পোষা কুকুরসহ বহু বন্যপ্রাণী। এরমধ্যে ৫-৭টি শেয়াল, একটি গন্ধগোকুল, একটি বেজি, একটি পোষা কুকুরসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে।
অভিযুক্ত কৃষক ফারুক হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, দিন, রাত খেটে পরিশ্রম করে ফসল ফলাই। আর আমার জমির ফসল নষ্ট করে বিভিন্ন প্রাণী। এ কারণে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে তিনি তার ভুল স্বীকার করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণমাধ্যমকে বলেন, খুলনা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগের ফরেস্ট গার্ড বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। বন বিভাগের সহায়তা চাইলে তাহারা জানান একটি টিম পাঠানো হবে। বন্যপ্রাণী হত্যা করা অপরাধ। কেউ অন্যায় ভাবে এমন ঘটনা ঘটাতে পারবে না। পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, বিষ প্রয়োগ করে প্রাণীগুলো হত্যা করা হয়েছে। পরে ওই প্রাণীগুলো মাটি চাপা দেওয়া হয়। প্রাণী হত্যা বন্যপ্রাণী আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা চাই অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বয়রা এলাকায় অবস্থিত খুলনা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বিভাগীয় কার্যালয়ে গতকাল রোববার দুপুরে খবর পেয়ে আমরা একটি টিম নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। আমরা ঘটনাস্থলে প্রায় ৮-১০টি সংরক্ষিত প্রাণীর মৃতদেহ ঘটনাস্থলে পাই। তারই প্রেক্ষিতে এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী।