এমডি আল মাসুম খান: আধিপত্য বিস্তার এবং দুটি হত্যার প্রতিশোধ নিতে কাউন্সিলর টিপুকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হত্যাকাণ্ডের রাতে টিপুকে গুলি করেছে খুলনার শীর্ষ চরমপন্থী নেতা হুজি শহীদের ভাতিজা পাপ্পু, পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী ক্রসফায়ারে নিহত মাদক ব্যবসায়ী রকির স্ত্রী ঋতু।
কক্সবাজারে পরিকল্পিত ভাবে এনেই গুলি করে হত্য করা হয়েছিল খুলনার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে। গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে কাঠের পোল রাস্তার ফুটপাতে টিপুকে গুলি করে হত্যা করে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু নামের খুলনার যুবক।
উল্লেখ্য এই পাপ্পু খুলনার শীর্ষ চরমপন্থী নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদের ভাতিজা। হুজি শহীদকে ২০১৫ সালের অক্টোবরে দৌলতপুর খান এ সবুর রোডে ইসলামি ব্যাংকের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর সে হত্যা মামলার আসামি গোলাম রব্বানী টিপু। হুজি শহীদ হত্যার পরিশোধ সহ স্থানীয় দ্বন্ধের জের ধরে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে ঋতু নামের নারীটি। হত্যার সময় পুরোদমে সহযোগির ভূমিকায় ছিলেন গোলাম রসুল নামের খুলনার দৌলতপুর থানা এলাকা কেন্দ্রিক অপর যুবক সহ কয়েকজন।
আলোচিত হত্যাকাণ্ডের পাঁচদিন পর মৌলভীবাজার থেকে সরাসরি জড়িত এই তিন আসামিকে ঘটনার গ্রেপ্তারের পর আজ বুধবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তিন জনই এই তথ্য জানিয়েছে বলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধুরেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, আলোচিত এই ঘটনার পর থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন তথ্যে পুলিশ জানতে পারে ঘটনায় জড়িত নারীসহ তার সঙ্গীয় কয়েকজন মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থান করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার থেকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি দল মৌলভীবাজারের জুড়ি থানার কাপনা পাহাড়ি চা বাগানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মৌলভীবাজার জেলার জিরি থানাধীন কাপনা পাহাড় এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার বিকালে গ্রেপ্তার হওয়া ৩ জন হলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দেওয়ানা মোল্লাপাড়ার সেলিম আকনের মেয়ে ঋতু (২৪), একই এলাকার মো: জামাল শেখের ছেলে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭), খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পাবলার মধ্য কারিগরপাড়ার হায়দার সরদার অদুদের ছেলে গোলাম রসুল (২৫)। জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ আরও বলেন, ৮ জানুয়ারি ঋতুকে সাথে নিয়ে কক্সবাজার আসেন গোলাম রব্বানী টিপু। ৯ জানুয়ারি গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন তথ্যে পুলিশ জানতে ঘটনায় জড়িত নারীসহ ৩ জনকে মৌলভীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ৩ জনের দেয়া তথ্য মতে কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর সৈকত বহুমুখী সমবায় সমিতি আবাসিক এলাকায় কক্স কুইন রিসোর্ট নামের আবাসিক হোটেলের ২০৮ নম্বর কক্ষের চিলেকোঠা হইতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও ৪ রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ঋতু নামের নারী কক্সবাজার ঘুরতে এসে কাউন্সিলর টিপুর সঙ্গে হোটেলে উঠেছিলেন। জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনের দেয়া তথ্যে হত্যাকান্ডের পর থেকে নিহতের সঙ্গি নারীর কোন হাদিস পাওয়া না গেলেও হোটেল কক্ষে বাসের একটি লাগেজ ট্যাগ পায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের হাতে পাওয়া বাসের ব্যাগেজ ট্যাগটি ছিল ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেসের একটি বাসের। মুলত সেই বাসেই কক্সবাজার আসে হত্যাকারিরা। এটির সুত্র ধরেই কাজ শুরু করে তারা। এই বাসের অন্যান্য যাত্রীসহ গ্রেফতার করা নারীর মোবাইল নম্বর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়। মোবাইল তথ্য প্রযুক্তির এক পর্যায়ে ঋতুর নাম উঠে আসে। তারপর থেকে ঋতুর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে মৌলভীবাজার জেলার জিরি থানার কাপনা পাহাড় এলাকা থেকে এই হত্যাকান্ডের অন্যতম সহযোগী ঋতুসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। জেলা পুলিশ সুপারের দেয়া তথ্য উঠে এসেছে গ্রেপ্তার ঋতু খুলনার দৌলতপুরের সেলিম আকন্দের মেয়ে। তার স্বামী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন। দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিলর টিপুর সাথে সখ্যতা তৈরি করে পুরো হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আটককৃত নারী। মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, গোলাম রব্বানী টিপু দৌলতপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ হত্যা মামলার আসামী ছিলেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে দৌলতপুর খান এ সবুর রোডে ইসলামি ব্যাংকের সামনে শহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর পাপ্পু সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শহীদের ভাতিজা। একাধিক মামলার আসামি পাপ্পুকে শুটার নামে খুলনা দৌলতপুর এলাকায় পরিচিত। হুজি শহীদ হত্যার প্রতিশোধ এই হত্যার একটি কারণ। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন ও অন্যান্য কারন রয়েছে।
উল্লেখ্য গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে রাস্তার ফুটপাতে গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে ঘটনাস্থল হত্যা করে। কক্সবাজার পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ৩ আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। কক্সবাজার জেলা আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দিলে আটক তিনজনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান গোলাম রব্বানী টিপু হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন খুলনার সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার চালুর কোন ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।