আমানুল্লাহ খান, জাবি প্রতিনিধি: বিশ্ব দর্শন দিবস-২০২৪ উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হয় এক বিশেষ সেমিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ এই সেমিনার আয়োজন করে।
'বৈষম্য মুক্ত সমাজ নির্মাণে দর্শন' এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। তখন বিভাগের দু'জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী দর্শনের কিছু বই প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির হাতে তুলে দেন। সেমিনারের বিষয় ছিল গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তি। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকাল পাঁচটায় সেমিনার শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
উক্ত বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ-এর সঞ্চালনায় বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইনের স্বাগত ভাষণের মাধ্যমে সেমিনার শুরু হয়। স্বাগত ভাষণে তিনি বলেন, মানুষ যখন রাষ্ট্র গঠন করে তখন প্রাকৃত অবস্থা মানুষকে আক্রান্ত করে। নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়। এই কারণে মানুষ রাষ্ট্র গঠন করার পর নিজের নিরাপত্তা কারও কাছে জিম্মা রাখে, যেন যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারা তাদেরকে অন্যদের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। কিন্তু যারা সরকার গঠন করেন তারা নিজেরাই দেশের ভিতর একটা উপনিবেশ স্থাপন করেন। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদেরকে উৎখাত করতে হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঈনুল আলম নিজার। এ-সময় তিনি বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে যদি ভাবেন শুধু গণতন্ত্র ও ভোটের জন্য তাহলে তা হবে সবচেয়ে বড় ভুল। ইউরোপের সেকুলারিজম এর সাথে আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষতার পার্থক্য রয়েছে। আমরা রাষ্ট্রে যে বিমানবে পরিণত হয়েছি তা থেকে মানবায়ন করতে হবে।
এ-সময় সংবিধানের সমালোচনা করে তিনি আটও বলেন, যারা ৭১-এর সংবিধান রচনা করেছেন তাদের কাছে নাগরিক আসলে কী তা স্পষ্ট ছিল না। আমাদের নাগরিক ও জনগণ থেকে বের হয়ে আসা উচিত, কারণ আমরা এই রাষ্ট্রের অংশীজন। দরকার মানবায়ন। আমাদের সংবিধান থেকে ব্যবস্থাপনায় যাওয়া উচিত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, প্রতিটা শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় একটা লিখিত ভাষা ও গাণিতিক ভাষায় দক্ষ করে তোলা। ভবিষ্যতে প্রাথমিক শিক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন করতে গিয়ে যেন আবার মূল বিষয় হারিয়ে না যায়।
এ-সময় দর্শন বিভাগ সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) রাসেল আকন্দ উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন রাখেন, ১০টা সংস্কার কমিশন হওয়ার পরেও শিক্ষা সংস্কার কমিশন কেন নেই। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষায় যে দুর্নীতি হয় তা বন্ধের দাবি করেন। শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়ানো এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতার যে বৈষম্য তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেন।
সেমিনারের সভাপতি, কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, জাবিতে এই প্রথম কোনো একাডেমিক সেমিনারে মন্ত্রী পর্যায়ের (উপদেষ্টা) কোনো ব্যক্তি প্রথম এসেছেন। এজন্য মাননীয় উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এ-সময় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার মানের পার্থক্য তা সরকারেরই ব্যর্থতা দাবি করে তা নিরসনের জনে সরকারের প্রতি আহ্বান করেন। শিক্ষকদের বেতন-ভাতার যে বৈষম্য তা মন্ত্রিপরিষদে তুলে ধরতে উপদেষ্টা প্রতি আহ্বান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে লক্ষ্য করে বলেন, যেখানে সাইন্স ফ্যাকাল্টি বাজেট পায় চার লাখ থেকে বারো লাখ সেখানে আর্টস ফ্যাকাল্টির বাজেট ৭০ হাজার। এটাই তো বৈষম্য। এই বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।
এছাড়াও আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেন তালুকদারের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সেমিনার সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।