ঢাকা | বঙ্গাব্দ

নবীন চোখে গণঅভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ: জাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যতিক্রমী আয়োজন

দেশপ্রেমকে ধারণ করে যে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে লড়াই বাংলাদেশের মানুষ শুরু করেছিল সেই লড়াই আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি ভিন্ন গতি পেয়েছিল। আমাদের সেই লড়াই এখনো রয়েছে। সেই লড়াইয়ের একটি অংশ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান।
  • আপলোড তারিখঃ 18-11-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 56830 জন
নবীন চোখে গণঅভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ: জাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যতিক্রমী আয়োজন - ছবি: সংগৃহীত
ad728

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে 'নবীন চোখে গণঅভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৮ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি বিশেষ মঞ্চ তৈরি করেছিলো। 


অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সোশ্যাল একটিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, উপস্থাপক ও আইনজীবী মানুজুর আর মতিন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফয়সাল মাহমুদ শান্ত। 


অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা লাকি, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড.মোঃ লুৎফুল এলাহী এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন রুনু।


আলোচনা সভায় সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, 'আমি মনে করি দেশের মানুষ নিজেদেরকে প্রজা মানতো এবং এই দেশটাকে শুধুমাত্র  তার দেশ ভাবতো একজনই, একজন ডাইনি খুনি কুলাঙ্গার মহিলা। আর অন্য সবাই নিজেদেরকে প্রজা ভাবতো। আমি মনে করি এই গণঅভ্যুত্থানের পরে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট, প্রত্যেকেই নিজেদেরকে নাগরিক ভাবে।'


তিনি আরো বলেন, 'কারো তোষামদি করার জন্য যাতে নতুন বাংলাদেশ তৈরি না হয়। আমাদের মনের ভিতরেই আমরা কেন যেন দাসত্ববরণ করি। এই দাসত্ব দূর না করতে পারলে কোনদিনও আমাদের এই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট সফল হবে না।'


যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, 'আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হতে পারিনি। এমন একটা সময়ে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি যখন বাংলাদেশ একটা ধ্বংসযজ্ঞের মতো পরিস্থিতিতে ছিল। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে আমরা অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি এবং নিচ্ছি। আন্দোলনে শতাধিক শিক্ষার্থীর চোখের মধ্যে ছররা গুলি ঢুকেছি। এর মধ্যে প্রায় পঞ্চাশজনের চোখের ভেতর থেকে সফলভাবে স্প্রিন্টার বের করা হয়েছে। ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা করা হয়নি। তখন সরকারী অনেক মেডিকেল কলেজে বলেও দেওয়া হতো যাতে তাদের চিকিৎসা না দেওয়া হয়।  অনেকেই তখন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানে অনেকে জমি জাগয়া বিক্রি করেও চিকিৎসা খরচ চালিয়েছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার জন্য যেসব খরচ হয়েছে তা সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। পিজি হাসপাতালের সঙ্গে ভিআইপিদের চিকিৎসার জন্য যে সুপার স্পেশালাইজড চালু করা হয়েছিল সেখানে পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। সেটিকে শুধুমাত্র জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিশেষভাবে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না তারা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতে পারে। সেখানে চিকিৎসাদানের জন্য আহতদের আনার প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে আহতদের দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে আহতদের পার্সপোর্ট না থাকা ও অনেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিছু জটিলতা রয়েছে।  আহতদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর  জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা আমাদের প্রথম প্রায়োরিটির মধ্যে ছিল। বাংলাদেশ প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে।  সেইরম একটা  পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে আমরা যেন দেউলিয়াত্বের দিকে না যাই সেই বিষয়ে কাজ করতে হচ্ছে। 


তিনি বলেন, বুয়েটের আবরার ফাহাদকে যখন হত্যা করা হয়েছিল তখন আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। তখন ওই ঘটনার আন্দোলন করার জন্যও আমাদের অনেক চাপ সহ্য করতে হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমরা আন্দোলনও করেছিলাম। দেশপ্রেমকে ধারণ করে যে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে লড়াই বাংলাদেশের মানুষ শুরু করেছিল সেই লড়াই আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি ভিন্ন গতি পেয়েছিল। আমাদের সেই লড়াই এখনো রয়েছে। সেই লড়াইয়ের একটি অংশ  চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান। এই গণঅভ্যুত্থান আংশিক সফল হয়েছে। কারণ আমাদের এক দফা দাবির মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরোধ। কিন্তু এখনো সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে বিরোধ করা সম্ভব হয়নি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটি বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।  ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে। সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামীলীগের পরিণতি কি হওয়া উচিত।'


ব্যাতিক্রমী এই অনুষ্ঠান শেষ হয় গণ অভ্যুত্থানের সময় র‍্যাপের মাধ্যমে সাড়া জাগানো র‍্যাপার সেজান এবং হান্নানের র‍্যাপ দিয়ে।