মো: আল মামুন খান: একাত্তরের অমীমাংসিত জায়গাগুলোকে মিমাংসিত করার জন্যই চব্বিশের আন্দোলন- এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশের উদ্যেগে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের 'ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর' প্রশান্ত ত্রিপুরা প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ বলেন, চব্বিশের আন্দোলন দু'টো জিনিস আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা বড়বা গত ৫০ বছর ধরে এই দেশটাকে অপশাসনে বিলীন রেখেছি। আমাদের ছেলেরা যখন এই 'পেইন' সহ্য করতে না পেরে ফেটে পড়ে প্রতিবাদ করে যে শ্লোগানগুলো তুলেছে, সেগুলো কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে। কারণ তাদের এবং দেশের অভিভাবক হিসেবে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, যারা ক্ষমতার বাইরে ছিলেন-তারা প্রত্যেকেই আমরা অন্যায়ের প্রশ্রয় দিয়েছিলাম বলেই আমার ২০২৪ হয়েছে।
তিনি বলেন, আর একাত্তর হয়েছিল বলে এবং একাত্তুরে অমিমাংশিত যা থেকে গেছে সেটার ফলেই চব্বিশ ঘটেছে সেই অমিমাংশিত জায়গাগুলোকে মিমাংশিত করার জন্য। একাত্তুরের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের প্রজন্ম আমরা অনেক কিছু করতে পারিনি। দেশের মাটি পেয়েছিলাম, পতাকা পেয়েছিলাম-গডতে পারিনি। ২০৪৪ এ আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশকে ভালোবাসতে শিখেছে, এই মাটিকে ভালোবাসতে শিখেছে, পতাকাকে সম্মান করতে শিখেছে। ওরা একবার দেশটাকে গড়বে। যেখানে আমরা পারিনি, সেখান থেকে ওদের শুরু। একাত্তরের উত্তরসূরী তোমরা। যে মুক্ত, সুন্দর সমাজ আমরা চেয়েছিলাম, সেটা করার এখনই সময়। আমরা সবাই মিলে করবো।
শারমীন মুরশিদ আরও বলেন, আমি ২৪টাকে মুক্তিযুদ্ধ মনে করি। আর যদি আমরা এই যুদ্ধে কোনোভাবে পা পিছলে পড়ি, জেনে রেখ আরেকটা প্রজন্ম দাঁড়িয়ে যাবে। তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে- ঠিক যেমন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলে।
এই জুলাই আন্দোলন আমাদের অনেক কিছু ভাবাচ্ছে উল্লেখ উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে এই আন্দোলনটি হচ্ছে- বহু বছরের দুমরে মুচরে পড়া আমার কষ্ট, আমার শ্বাসরুদ্ধকর সমাজ ব্যবস্থা। যেটা আমরা বড়রা সফল হইনি ভেঙে দিতে। বরং আমরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি, মিথ্যে সমাজ গড়তে সহযোগিতা করেছি এবং যেটা আমরা করতে পারিনি আমাদের বাচ্চারা সেটা করেছে। এর থেকে যে শক্তিটা বেরিয়ে এলো, এই শক্তি আমার দেশকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে। এদেশের তরুন সমাজ জেগে উঠেছে। আর একবার জেগে উঠলে তো আর ঘুমাতে যাওয়া যায় না। আর জাগ্রত তরুন এদেশকে এবার পরিবর্তন করবে।
দারিদ্র্যতার বিষয়ে উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ জানান, আমি যা ভাবি, আমি তাই। যদি আমি ভাবি আমি দরিদ্র নই, কারও শক্তি নাই আমাকে বিশ্বাস করানো যে আমি দরিদ্র। আর যখন আমি দারিদ্রতা অস্বীকার করি তখন দারিদ্র আর আমার জীবনে অস্তিত্ব পায় না। আমি মনে করি-এতটাই মৌলিক, এতটা শক্তিশালী, এতটাই সহজ দারিদ্রকে শেষ করে দেওয়া। অর্থাৎ দারিদ্যকে নি:শেস করতে হ'লে প্রথমে আমার মনের জগত থেকে দারিদ্রকে মুছে ফেলতে হবে।
অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা প্রমুখসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি দেশে ধীরে ধীরে কিভাবে গণতন্ত্র মরে গেলো, বহুদলীয় রাজনীতি মরে যেতে লাগলো। আমরা কথা বলার অধিকার আমরা হারাতে শুরু করলাম, নির্বাচন ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে শুরু করলো। পুরো শাসনব্যবস্থা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। এসময় ভয় এবং ত্রাসের রাজত্ব শুরু হয়েছিলো। এখানে গণতন্ত্র বলে কিছু ছিলোনা। বিগত সরকারের আমলে কঠিনতম অবস্থায় ছিলো বাংলাদেশ।
এর আগে, 'তারুণ্যের প্রত্যয়ে মুছে যাবে ভেদ,গড়ব সুশাসন ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ" এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে গতকাল ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশের উদ্যেগে অষ্টাদশ জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫ যা পরেরদিন ২৫ জানুয়ারি দিনভর বর্নাঢ্য আয়োজনে শেষ হয়।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) অনুষ্ঠানে ডঃ বদিউল আলম মজুমদার সম্পর্কে লেখা Kathy Burke এর লেখা “Today I saw a revolution” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৮ শতাধিক স্বেচ্ছাব্রতী তরুণসহ সম্মেলনে উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে।