ঢাকা | বঙ্গাব্দ

আশুলিয়ার শিমুলিয়ায় নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির 'টপ সয়েল'!

স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, মাটিকাটার এই সিন্ডিকেটের সদস্য হলো- কোহিনুর, রবিউল, আবুল হোসেনসহ আরও কয়েকজন। আর এদের সমন্বয়ক হলো- আনিস নামের এক ব্যক্তি।
  • আপলোড তারিখঃ 24-12-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 120537 জন
আশুলিয়ার শিমুলিয়ায় নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির 'টপ সয়েল'! - ছবি: খবর দিনরাত
ad728

মো: আল মামুন খান: পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও নিষিদ্ধ। অথচ ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি জায়গায় নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি (টপ সয়েল)। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটা। রাতের অন্ধকারে যে যেভাবেই পারছে স্কেভেটর (মাটি খননযন্ত্র) দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ডাম্পার (মিনি ট্রাক) যোগে ইটভাটায় সরাবরাহ করা হচ্ছে।


সরেজমিন শিমুলিয়া ইউনিয়নের গাজীবাড়ী, ইন্টারস্টপ, বালুরচর প্রভৃতি এলাকা ঘুরে দেখা যায় ভেকু (খনন যন্ত্র) দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর রণস্থল এলাকায় স্কেভেটর দেখা গেছে। সেখানের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই এলাকায় এখনো মাটিকাটা শুরু হয় নাই। ফসলি জমি পর্যন্ত স্কেভেটর যাওয়ার রাস্তা তৈরী হচ্ছে।


স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, মাটিকাটার এই সিন্ডিকেটের সদস্য হলো-  কোহিনুর, রবিউল, আবুল হোসেনসহ আরও কয়েকজন।  আর এদের সমন্বয়ক হলো- আনিস নামের এক ব্যক্তি।


উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। পুনরায় কাজটি করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আর ১০ বছরের কারাদণ্ড।


তারপরও প্রশাসনের নির্বিকারতার সুযোগে এই সিন্ডিকেট বছরের পর বছর আইনের তোয়াক্কা না করে এভাবে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে আসছে।


এব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হয় আনিস নামের ব্যক্তির কাছে। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, 'জমির মালিক জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রী করেছে, আমি মাটি কিনে সেখান থেকে তুলে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রী করি। আপনি জমির মালিককে ধরেন।'


প্রসঙ্গত, মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণীর দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে উৎসাহিত করে। আর কৃষকরা লোভে পড়ে নগদ টাকার আশায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দেন। অনেক সময় জমির মালিককে না জানিয়ে রাতের আঁধারেই কেটে নেওয়া হয় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। আবার, এই চক্রের সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহসও পান না জমির মালিকরা। ফলে ২০-৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে ধীরে ধীরে ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হয়।


স্থানীয়রা এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে উদ্ভুত নানা সমস্যার বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন। মো: ইলিয়াস হোসেন নামের একজন বলেন, এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় আমাদের সকলের ক্ষতি হচ্ছে। বাড়িঘরের এবং ফসলি জমির ক্ষতির পাশাপাশি ড্রাম ট্রাকে মাটি আনা-নেওয়ার সময় আমাদের রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের দেখা উচিত।


কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি গভীরের মাটিতেই মূল পুষ্টিগুণ থাকে। মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাবে না। এতে সারের পেছনে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।


এদিকে, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। তবে ব্যক্তির নিজের প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সীমিত পরিসরে বালু বা মাটি তুলতে পারবেন এ বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) বিল–২০২৩’ পাস করা হয়েছে।


উক্ত বিলে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না, যদি তা উর্বর কৃষি জমি হয় বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, কৃষি জমির উর্বর উপরিভাগের মাটি হলে যদি পরিবেশ-প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধিত হয়, ড্রেজারের মাধ্যমে বা যদি অন্য কোনো কৌশলী প্রক্রিয়ায় বালু বা মাটি উত্তোলন করা হয়, যাতে এই জমিসহ পার্শ্ববর্তী অন্য জমির ক্ষতি, চ্যুতি বা ধসের উদ্ভব হয়।


তবে কোনো ব্যক্তি বসতবাড়ি নির্মাণ বা নিজের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে নিজের মালিকানাধীন জমি থেকে সীমিত পরিসরে বালু বা মাটি তুলতে পারবেন।


মাটি কাটার বিষয়টি আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি)  ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলাম এবং সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু বকর সরকারকে অবগত করা হয়েছে।



notebook

জাবিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রেম বঞ্চিত সংঘের বিক্ষোভ মিছিল