ঢাকা | বঙ্গাব্দ

নয়ারহাটে অবৈধ বালুর ব্যবসার কারণে নাব্যতা হারাচ্ছে বংশী

বাল্কহেড ও ট্রলারগুলোর অদক্ষ চালকদের কারণে নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীতে বালুর বস্তা ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে এসব গদি। বালু উত্তোলনের সময় নদীতে বালু পড়ায় নাব্যতা হারাচ্ছে বংশী। এর ফলে নদী ভরাট হয়ে ক্রমেই সরু হয়ে আসছে।
  • আপলোড তারিখঃ 07-02-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 92311 জন
নয়ারহাটে অবৈধ বালুর ব্যবসার কারণে নাব্যতা হারাচ্ছে বংশী - ছবি: খবর দিনরাত
ad728

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থানাধীন নয়ারহাট এলাকায় চলছে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা। বালুমহাল ঘোষণা না হওয়ায় এবং নদীর তীরবর্তী নদীর জায়গা ব্যবহার করে চলমান এই কার্যক্রমের বৈধতা কতটুকু এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের ধীরে চলো নীতিতে স্থানীয় সচেতন মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।


সরেজমিন নয়ারহাট বংশী নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের নয়ারহাট অংশে ডানে ও বামে নদীর তীরবর্তী এলাকায় অনেকগুলো বালুর গদি। এসব গদিতে নদীপথে বালুবাহী ট্রলার ও বাল্কহেড যোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু এনে ড্রেজারের সাহায্যে গদিতে ফেলা হয়। আর এসব গদির একটা অংশ বালুর 'ডাম্পিং প্লেস' হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে করে সরকারের অনুমতি ছাড়া নদী ও নদীর জায়গা ব্যবহারে সরকার যেমন হারাচ্ছে রাজস্ব, পাশাপাশি বাল্কহেড ও ট্রলারগুলোর অদক্ষ চালকদের কারণে নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীতে বালুর বস্তা ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে এসব গদি। বালু উত্তোলনের সময় নদীতে বালু পড়ায় নাব্যতা হারাচ্ছে বংশী। এর ফলে নদী ভরাট হয়ে ক্রমেই সরু হয়ে আসছে।


একসময় যখন বংশীর প্রমত্ত গতিধারা, সেইসময় থেকে অদ্যাবধি বংশী নদীর নয়ারহাট মাছবাজারের ঠিক উত্তরে নদীর পাড় নয়ারহাট ও সংলগ্ন এলাকার মালামাল আনা-নেওয়ার ঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এইস্থানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুরো জায়গাটি বালুভর্তি বাল্কহেড, ড্রেজার এবং বালু পরিবহনের জন্য বিশাল আকৃতির পাইপ দিয়ে দখল অবস্থায় রয়েছে। ড্রেজার দিয়ে এই বিশাল আকৃতির পাইপলাইন বহর এলজিইডির সড়ক ভেদ করে, নয়ারহাট বাজারের বিভিন্ন অংশ দিয়ে আরও পশ্চিমে একটি জলাশয়ের পাশে গিয়ে শেষ হয়েছে। 


এভাবে নদীর ঘাট দখল হয়ে যাওয়ায় নদীপথে স্থানীয় মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। খেয়া পারাপারেও বিঘ্ন ঘটছে।


এব্যাপারে নয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে বালুর গদি গড়ে ওঠায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। প্রতিদিন শত শত বালুর ট্রাক চলাচলের কারণে তাদের বাজারে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে সমস্যা হয়। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বালুর গদি এবং সমগ্র বালুর ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি রকি দেওয়ান। ৫ আগস্টের আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ কিছু প্রভাবশালী অবৈধভাবে এসব বালুর গদি বসিয়ে ব্যবসা করতেন। জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর স্থানীয় বিএনপি এবং যুবদল এই বালুর গদির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আর রকি দেওয়ান থানা বিএনপি'র প্রভাবশালী এক নেতার আশীর্বাদে এদের নেতৃত্বে চলে এসে এই অবৈধ বালু সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। 


উল্লেখ্য, ফ্যাসিস্ট আমলেও রকি দেওয়ান আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছত্রচ্ছায়ায় চুটিয়ে বালুর ব্যবসা করে এসেছেন।


নয়ারহাট বংশী নদীর তীরবর্তী এসব বালুর গদির জায়গা নদীর জায়গায় কিনা কিংবা জেলা প্রশাসন থেকে কোনো অনুমতি রয়েছে কিনা এবিষয়টি স্পষ্ট নয়। অপরদিকে, নদীর তীর থেকে এলজিইডি নির্মিত সড়ক পর্যন্ত নদীর জায়গা ঠিক কতটুকু সেটা নির্ধারণের কোনো ল্যান্ডমার্ক পাওয়া না যাওয়ায়, গদিগুলো কি সওজের জায়গায়, না ব্যক্তি মালিকানার জায়গায় তাও স্পষ্ট নয়।


এব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় সাভার বাগধনিয়া ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো: আনোয়ার হোসেনের কাছে। তিনি জানান, এই বালুর গদির কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় হলেও বেশীরভাগই নদীর জায়গায় পড়েছে। তবে সার্ভেয়ার দিয়ে সিএস ও এসএ দাগ নির্ধারণের পরই এই মালিকানার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।


মো: আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, আসলে বালুমহাল ঘোষণা না হওয়ায় বর্তমানে যারা বালুর গদি বসিয়ে ব্যবসা করছেন এটা অবৈধ। তবে এসব ব্যবসায়ীরা চান যাতে এখানে বালুমহাল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় সরকার এটা ঘোষণা করতে পারছে না।


এদিকে, সাভার রাজস্ব সার্কেলের কানুনগো জিয়াউল হাসান জানান, নয়ারহাটে যতগুলো বালুর গদি রয়েছে এসবগুলোই নদীর জায়গা ব্যবহার করছে। আর তারা সবাই অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন।


সাভার রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি)'র সাথে যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় এব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। 


বালুর গদির বিষয়ে পাথালিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি রকি দেওয়ান জানান, আমি আমার বাপদাদার পৈতৃক জায়গায় একটা বিজনেস করতেছি। এইটা যদি আপনাদের চোখে অবৈধ হয় তবে আপনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। আর সরকারি জায়গায় বাল্কহেড ও ট্রলারযোগে বালু আনে, আমি সেখান থেকে কিনে এনে আমার পৈতৃক সম্পত্তিতে ইট-বালুর ব্যবসা করি। আর নদীর পাড়ে যে গদিটা দেখে আপনার মনে হয়েছে ওটা আমার, সেটা রাসেল নামের বরিশালের এক ছেলের গদি।


এসময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, নদীর পাড় থেকে বাজারের মাটির তলদেশ দিয়ে বিশাল যে পাইপ দিয়ে নিজ গদিতে বালু আনেন, সেটার কোনো অনুমোদন আছে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে রকি দেওয়ান জানান, ভাই, আপনারা সাংবাদিক মানুষ, মোবাইলে আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই না। আপনি আমার অফিসে এসে চা খেয়ে যান।


তবে স্থানীয়দের অভিমত, বংশী নদীর নাব্যতা রক্ষায় এবং নয়ারহাট বাজার সংলগ্ন নদীর ঘাট সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য করতে অচিরেই এসব অবৈধ বালুর গদি বন্ধ করা প্রয়োজন। এব্যাপারে তারা সাভার উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।




notebook

জাবিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রেম বঞ্চিত সংঘের বিক্ষোভ মিছিল