ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জাবিতে সহিংস হামলার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম নাইমের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (জাবি শাখা), জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
  • আপলোড তারিখঃ 12-12-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 63857 জন
জাবিতে সহিংস হামলার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন - ছবি: খবর দিনরাত
ad728

জাবি প্রতিনিধি: জুলাই বিপ্লবে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলাকারী ও হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা এবং বিচার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।


আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২.৩০ এ সকল হামলাকারী ও হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবিতে "গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন" এর ব্যানারে  বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন একদল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম নাইমের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (জাবি শাখা), জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ।


গনঅভ্যুত্থানে আহত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শুভ বলেন, জুলাই-আগস্টে আমাদের উপর যে হামলা হয়েছিলো সেখানে আমি নিজে একজন আহত। আমার শরীরে এখনো অনেক স্প্লিন্টার রয়েছে যেগুলো অপারেশন করেও বের করা সম্ভব হয়নি। আজকে ৪ মাস হয়ে গেলেও আমাদের প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ভেবেছিলাম ৫ আগস্ট পরবর্তী আমরা এক স্বাধীন দেশ পাবো, খুব দ্রুত আমরা বিচার পাবো এবং যারা হামলার সাথে জড়িত ছিলো তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। কিন্তু ৪ মাস হয়ে গেলেও তাদের গ্রেফতার তো দূরের কথা, তাদের টিকিটাও খুজে পায়নি প্রশাসন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের পদক্ষেপও নেয়নি প্রশাসন। 


তিনি আরও বলেন, আমরা দেখছি যে হামলার মদদদাতা যে শিক্ষকরা তারা পুনর্বাসিত হচ্ছেন, যারা হামলাকারীরা ছিলো তারা পুনর্বাসিত হচ্ছে, শিক্ষকদের ক্লাস নেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে, হামলাকারীরা এসে পরিক্ষার অংশগ্রহণ করছে, এটা কোনভাবেই হতে পারে না। আমার রক্তভেজা যে টি-শার্ট ছিলো সেটা এখনো আছে, রক্তের দাগ গুলো এখনো শুকায়নি। তার উপর পা রেখে কিভাবে ভার্সিটি প্রশাসন হামলাকারীদের এবং হামলায় মদদদাতাদের ভার্সিটিতে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিচ্ছে। প্রশাসন বারবার ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা বললেও আমরা আজ পর্যন্ত তাদের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখতে পারিনি।


মানববিন্ধনে উপস্থিত বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, জাবি শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি বলেন, যে প্রশাসন বর্তমান বাংলাদেশে এস্ট্যাব্লিশ হয়েছে, তাদের উচিত ছিলো নিজে থেকে এই বিচার গুলো করা। আমরা কেন আজকে আমাদের উপর যারা হামলা করেছে, আমাদের যারা আহত করেছে, আমাদের যারা শহীদ করেছে, কেন তাদের বিচারের জন্য কেন আমাদের আজকে রাজপথে দাড়াতে হবে। এই প্রশাসনের কাজ কী তাহলে? এই প্রশাসন যদি এই সন্ত্রাসীদের বিচার না করে দেশ চালাতে যায়, কখনই সুষ্ঠুভাবে দেশ চালাতে পারবে না। তারা আনসার লীগ, পুলিশ লীগ, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লীগ হিসেবে আবির্ভূত হবে তারা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পাই ১৫ জুলাই যে নেক্কারজনক হামলাকান্ড চালায় সেখান অসংখ্য শিক্ষার্থী শহীদ হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কি ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো আমরা সবাই দেখেছি। অথচ সেই হামলাকারী সন্ত্রাসীরা আজ ক্যাম্পাসের আশেপাশে, ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়। তারা তাদের পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্রজীবন শেষ করে সার্টিফিকেট নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিলো ক্ষমতায় আসার পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার। অথচ দেখা যায় যদি ছাত্রলীগের কেউ আহত হয়, তাকে আহত করার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন এক থেকে দুইদিনের মধ্যে ব্যাবস্থা নিতে পারে। কিন্তু যারা এই গণ অভ্যুত্থানে আহত হয়েছে তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত ব্যাবস্থা নিতে পারছে না। 


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা এখনো আপনাদের উপর আস্থা রেখেছি বিধায় আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলনের ঘোষণা দেয়নি। আমরা আপনাদের উপর সেই আশা রাখতে চাই এবং আপনার আমাদের এই আশার প্রতিদান দিবেন এই আশা করছি। 


গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, গণঅভ্যুত্থানের চার মাস পরেও আজকে আমাদেরকে জুলাই বিপ্লবে হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিতের জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে। আমার ভাই, বন্ধুরা, শিক্ষকরা শরীরে স্প্রিন্টার নিয়ে হাসপাতালে শুয়েছে, আমার সহযোদ্ধাদের অঙ্গহানি হয়েছে, শহীদ পরিবারের দুঃখ ভারাক্রান্তের কথা শুনলে এখনো আমরা আমাদের অশ্রু নিবারণ করতে পারিনা। আমার বিপ্লবী বন্ধুরা হাসপাতালে শুয়ে আছে, আর আপনারা বসে বসে শিক্ষক রাজনীতির সমীকরণ মিলাচ্ছেন।


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে যদি আপনারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না করেন তাহলে সাত দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবন সম্পূর্ণরুপে বন্ধ থাকবে। আগে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে, তাদের বিচার হবে তারপর একাডেমিক কার্যক্রম চলবে। আমরা কোন খুনি  শিক্ষকের সঙ্গে লিয়াজু করতে চাই না, কোন হামলাকারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে এক বেঞ্চে বসে ক্লাস করতে চাই না।


তিনি আরো বলেন, আমরা স্বৈরাচার হাসিনার পতন করতে মাত্র ৩৬ দিন সময় নিয়েছি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুই মাসের বেশি সময় নিচ্ছে। বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক। যদি আগামী সাত দিনের মধ্য হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের  বিচার নিশ্চিত না করা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের কারো পরিনাম ভালো হবে না।


মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলে "আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ" , "আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে" স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। 



সর্বশেষ সংবাদ