ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কেন এত দাম রক্তচন্দনের?

আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবেই এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয় । বদহজম , ডায়েরিয়া-সহ বেশ কয়েকটি দৈনন্দিন রোগের চিকিৎসাতেই এই কাঠ কাজে লাগে ।
  • আপলোড তারিখঃ 12-12-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 40879 জন
কেন এত দাম রক্তচন্দনের? - ছবি: সংগৃহীত
ad728

ডেস্ক রিপোর্ট: ‘লাল সোনা’ পাচার করে পুষ্পার এতো রমরমা। কেন এতো দাম রক্তচন্দনের ? আর চীনেই বা এই রক্তচন্দন কাঠের চাহিদা সবচেয়ে বেশী কেন ?


তামিলনাড়ু সংলগ্ন অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা--নেল্লোর , কুর্নুল , চিত্তোর এবং কাডাপ্পা জেলায় এই গাছ মেলে । পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভালো হয় । এক একটি গাছের উচ্চতা ৮-১২ মিটার ।


৫ই  ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে অল্লু অর্জুনের বহুপ্রতীক্ষিত ছবি ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ । ২০২১ সালটির সুপারহিট ছবি ‘পুষ্পা : দ্য রাইজ়’ ছবির দ্বিতীয়ভাগ । এই সিনেমাটিতে মূল চরিত্র একজনই , পুষ্পারাজ । প্রথম ছবিটির মতো তাকে ঘিরেই গল্প আবর্তিত হয়েছে । সেই চরিত্রকে অল্লু পর্দায় সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ।


তবে পুষ্পারাজ ছাড়াও এই ছবির আর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো লালচন্দন ,যেমন ছিল ছবির প্রথমপর্বেও । রক্তচন্দন কাঠের চোরাপাচার নিয়ে এই ছবির কাহিনী । কেন্দ্রীয় চরিত্র পুষ্পা কীভাবে এই রক্তচন্দন কাঠ চোরা পাচার করে এক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে ,ছবিটির ছত্রে ছত্রে সেই দৃশ্যই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক ।


এটা তো গেল সিনেমার গল্প । কিন্তু ঐ সিনেমাটির মত বাস্তবেও লাল চন্দন অথবা রক্তচন্দনের গাছ বহুমূল্য একটি জিনিস ।


কিন্তু রক্তচন্দনের কেনই বা এতো দাম ? সেই কাঠটিরই এতো চাহিদা কেন ? কেনই বা কালোবাজারি চলে লাল চন্দনকাঠ নিয়ে ?


রক্তচন্দনকে এই দেশে ‘লাল সোনা’ বলা হয় । সোনার মতোই বহুমূল্যবান এই গাছ । আর এই গাছটি হল খুবই বিরল প্রজাতির ।


‘পুষ্পা’ চিত্রে যে জঙ্গলের কথা বলা হয়েছে , রক্তচন্দন  শেষাচলম পাহাড়ের ওই ঘন জঙ্গলেই পাওয়া যায় ।


তামিলনাড়ু সংলগ্ন অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা--নেল্লোর , কুর্নুল , চিত্তোর এবং কাডাপ্পা জেলায় এই গাছ মেলে । পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভালো হয় । এক একটি গাছের উচ্চতা ৮-১২ মিটার ।


লালচন্দন হল এক ‘এনডেমিক স্পিসিস’। ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বলতে বোঝায় এমন একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর প্রজাতি যেটি একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ।


প্রাকৃতিকভাবেই এই ‘এনডেমিক স্পিসিস’ পাওয়া যায় না বিশ্বের অন্য কোথাও । আর সেই জন‍্য আন্তর্জাতিক বাজারেও রক্তচন্দনের চাহিদা কল্পনাতীত ।


দুই ধরনের চন্দনকাঠই পাওয়া যায় । সাদা এবং লাল । সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল কিম্বা রক্তচন্দনে কোনও গন্ধই নেই ।


কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্যই সারা বিশ্ব জুড়ে এর বিপুল চাহিদা । আর সেই চাহিদার জন‍্যই এই কাঠ পাচার হয় । ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সঙ্ঘ (আইইউসিএন) এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণীর তালিকাভুক্ত করেছে ।


এই কাঠ এতো বিপুল পরিমাণে কাটা ও পাচার হয়েছে যে , সমগ্র বিশ্বে অবশিষ্ট রয়েছে আর মাত্র পাঁচ শতাংশ  গাছ ।


আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবেই এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয় । বদহজম , ডায়েরিয়া-সহ বেশ কয়েকটি দৈনন্দিন  রোগের চিকিৎসাতেই এই কাঠ কাজে লাগে ।


রক্ত শুদ্ধিকরণের গুণও রয়েছে এই রক্তচন্দন কাঠের । ঔষধি গুণ ছাড়া অন্যান্য শিল্পেও এই রক্তচন্দন কাঠের বিপুল চাহিদা । এসব ছাড়া পূজা-আর্চা অথবা প্রসাধনী দ্রব্য তৈরীতেও এই কাঠ ব্যবহৃত হয় ।


উল্লেখ্য , রক্তচন্দন থেকে যে নির্যাস পাওয়া যায় , তাও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় । রক্তচন্দনে বেশ কিছু ‘আর্থ মেটাল’ পাওয়া যায়।


রক্তচন্দনের কাঠ সহজে পোড়ানোও যায় না । পূর্বঘাট এলাকাটি শুষ্ক হওয়ায় সেখানকার জঙ্গলে আগুন ধরে যাওয়া অথবা দাবানলের ঘটনা ঘটবার আশঙ্কা প্রবল । রক্তচন্দন প্রাকৃতিকভাবেই আগুন রোধ করতে সক্ষম ।


বিশ্বের আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি প্রতি তিনহাজারের বেশি টাকা দাম থেকেই এই কাঠ বিক্রয় শুরু হয় ।


ভারতে এই গাছ কাটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ । তবে এমন কাঠও চোরা পাচার হয় আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে । পাচার রোখবার জন্য ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ও গঠন করা হয়েছে ।


চীন , জাপান , সিঙ্গাপুর , সংযুক্ত আরব আমিরশাহী বা  অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের বিপুল চাহিদা । তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চীনেই । তাই পাচারও বেশী হয় ঐ দেশে । আসবাব , ঘরসজ্জা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরীতে সেই দেশে এই কাঠের চাহিদা খুবই বেশী ।


উল্লেখ্য , অন্ধ্রপ্রদেশে প্রাকৃতিকভাবে রক্তচন্দনের দেখা পাওয়া গেলেও এখন বাণিজ্যিক চাহিদা আর রক্তচন্দন বৃক্ষের অস্তিত্বের সঙ্কটের কথা ভেবে অন্য রাজ্যেও এই গাছের চাষ করার চেষ্টা চলছে।


তথ‍্য  : আনন্দবাজার



সর্বশেষ সংবাদ
notebook

চট্টগ্রামে আলোচিত হানিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার