আমানউল্লাহ খান, জাবি প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মশাল মিছিল করেছে একদল শিক্ষার্থী।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে একটি মশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বটতলায় এসে শেষ হয়। মশাল মিছিলে "মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, সন্ত্রাস লীগের আস্তানা ভেঙ্গে দাও মুড়িয়ে দাও, আরিফ সোহেলের উপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দে, গোলামী না আজাদী - আজাদী আজাদী, দালালী না রাজপথ - রাজপথ রাজপথ" ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন৷ সমাবেশে বক্তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা, হামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের সনাক্ত করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ানকে হত্যার হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। এসময় বক্তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন,গতকালকে আরিফ সোহেলের উপর হামলা থেকে শুরু করে আয়ানের উপর হুমকি একই সূত্রে গাঁথা। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগের দোসরদের সাড়াশি অভিযানের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এ-সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে জুলাইয়ে হামলাকারীদের দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেসব শিক্ষক গণহত্যার পক্ষ নিয়েছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যত্থায় কামরুল আহসানের (বর্তমান ভিসি) অবস্থা নুরুল আলমের (সাবেক ভিসি) মতো হবে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানের এই দাবি পূরণ না হবে ততদিন পর্যন্ত ছাত্রজনতা মাঠে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে থাকবে।"
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, "চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী আহতরা যখন হাসপাতালে শুয়ে দিন পার করছে, তখন সরকারের ব্যর্থতায় দেশজুড়ে মাথাচাড়া দিচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা। এত বড় আন্দোলনের পরেও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারিত হওয়া ন্যাক্কারজনক। আমরা দাবি জানাই, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।"
এ-সময় আইবিএ ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহানা বিনতে ফারিনা বলেন, "কেন্দ্রীয়ভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে নিয়োজিত যেসব সমন্বয়ক রয়েছেন, তাদের ওপর বারবার হামলা হচ্ছে। সেসব হামলা ছিনতাইয়ের নামেই হোক বা অন্য যেকোনোভাবে হোক, আমরা এটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি যে ফ্যাসিস্টদের মদদপুষ্টরাই এসব হামলা করছে। সরকার ও প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে, তাদের বৈধতা আমাদের এই আন্দোলন ও বিপ্লবের মাধ্যমেই নির্ধারিত। তারা যদি আমাদের বিপ্লবীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় বা গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের পতনও অনিবার্য। যতদিন না আমরা বিচার পাব এবং যতদিন না দেশের জনগণ নিরাপদ বোধ করবে, ততদিন আমরা রাজপথে অবস্থান করব।"