ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ইলিয়াস আলী গুমের পর কয়টা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল এবং সংবাদ প্রকাশের পর কারা এটা নিয়ে কটূক্তি করেছিল সেটা আমাদের দেখতে হবে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কারা কারা জাস্টিফাই করেছিল তা বিশ্লেষণ করতে হবে।
  • আপলোড তারিখঃ 20-11-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 3656 জন
জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত - ছবি: সংগৃহীত
ad728

ডেস্ক রিপোর্ট: ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে ‘জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা : জবাবদিহিতা ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।


বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ এর আয়োজনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের শহীদ জহুর হোসেন হলে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।


ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ এর আহ্বায়ক সাংবাদিক জয়নাল আবেদিন শিশিরের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র প্লাবন তারিকের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও শিক্ষক মাহাবুব আলম।


এ সময় তিনি ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো-

১. স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার গণমাধ্যমের জন্য অনেকগুলো নীতি ও আইন প্রণয়ন করে গেছেন। কিন্তু সবই করেছেন নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা থেকে। তাই বিদ্যমান সব নীতি-আইন থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা পরিমার্জনা করে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সঠিক তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার সম্ভব হবে।

২. বাংলাদেশের বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের যেসব মালিক ও নির্বাহীরা গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করেছে, তদন্ত সাপেক্ষ তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন সাংবাদিকতা করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

৩. মিডিয়ার মালিকানা ও অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন যাতে রাজনৈতিক প্রভাব বা স্বার্থপরায়ণতা এড়ানো যায়। বড় করপোরেট ও রাজনৈতিক দলের মালিকানাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনি কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে।

৪. যে কোনো সময় যে কোনো টেলিভিশন ও পত্রিকা সরকার বন্ধ করে দিতে পারার যে ভয়ংকর পদ্ধতি বা নীতি রয়েছে তা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। ভবিষ্যতে আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির মতো কোনো গণমাধ্যম যাতে বন্ধ না হয়।

৫. সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন ও পেশাগত সুরক্ষার জন্য টেকসই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে একটি গণমাধ্যম কমিশন ও নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।

৬. গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড প্রণয়ন করতে হবে। অনতিবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। শ্রম আইন অনুযায়ী সংবাদকর্মীদের মাঝে লভ্যাংশ বণ্টন করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গুম, নির্যাতন ও হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।

৮. একটি স্বতন্ত্র মিডিয়া কমিশন গঠন করা যেতে পারে, যা সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মিডিয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করবে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা, বেতনসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করবে।


আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ফ্যাসিবাদি শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের কী ভূমিকা ছিল তা আমরা জানি। আওয়ামী লীগকে শুধু ফ্যাসিবাদি না বলে কীভাবে গণমাধ্যম এই আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর সম্মতি উৎপাদন করছে তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।


তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী গুমের পর কয়টা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল এবং সংবাদ প্রকাশের পর কারা এটা নিয়ে কটূক্তি করেছিল সেটা আমাদের দেখতে হবে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কারা কারা জাস্টিফাই করেছিল তা বিশ্লেষণ করতে হবে।


দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শেখ মুজিবের শাসনামল যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব চারটা পত্রিকা বাদে বাকিসব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অগণিত সাংবাদিক বেকার হয়ে যায়। শেখ হাসিনাকে আমরা হিটলারকে অনুসরণ করতে দেখেছি। শেখ হাসিনা এমন একটি ব্যবস্থা কায়েম করেছিলে যেখানে মিডিয়া সবসময়ই তার গুণগাণে ব্যস্ত ছিল।


দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চিফ রিপোর্টার আব্বাস উদ্দিন নয়ন বলেন, ফ্যাসিস্টরা যেভাবে সব প্রতিষ্ঠানকে দখলে নেয়। ঠিক সেভাবে তারা মিডিয়াকেও দখলে নিয়েছিল। সাংবাদিকদের একপক্ষ সরকারের সুবিধা নিয়ে তাদের অংশীদারের ভূমিকা পালন করেছিল।


বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ বলেন, সাগর-রুনী হত্যার ঘটনায়, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতনের ঘটনায় সাংবাদিকেরা এক হয়ে কথা বলতে পারেনি। মিডিয়া ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে আমরা সম্মিলিত কোনো কণ্ঠস্বর এখনো দেখিনি। আমরা মনে করি সাংবাদিকদের সততা, সাহস এবং ন্যায় সঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা থাকতে হবে।


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আওয়াল বলেন, শিশির ভট্টাচার্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অনেক ব্যঙ্গচিত্র আঁকলেও তাকে কেউ নির্যাতন করেনি। অথচ


শফিকুল ইসলাম কাজলকে তীব্র নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। শেখ হাসিনাকে গণমাধ্যমে এখনো স্বৈরাচার না বলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলা হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও একতার বাংলাদেশের সদস্য সচিব তাহমিদ আল মুদাসসির বলেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত আন্দোলনে আমরা সংবাদকর্মীদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। গণমাধ্যমগুলোর ভিতরের অবস্থা ভিন্ন হলেও মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকরা আমাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন।


সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ফ্যাসিবাদের একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথম গণমাধ্যমকে কোণঠাঁসা করেছিল শেখ মুজিবুর রহমান।


নিউ এইজ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ বলেন, সাংবাদিকতা আর সাংবাদিক এক জিনিস না। ব্যক্তির দায় থাকলে তার বিচার হবে কিন্তু বিগত ফ্যাসিবাদের সময় অসংখ্য আর্থিক কেলেঙ্কারি খবর সামনে এসেছে সাংবাদিকতার জন্যই। স্বৈরাচারীর একটা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় অনেক সাংবাদিক স্বৈরাচারকে প্রশ্ন করতে ভয় পেয়েছিল। এর মধ্যেও কিছু সাংবাদিক তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছে।


বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিনিয়র সাংবাদিক এস এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিজম টিকিয়ে রাখার জন্য যেসব সাংবাদিকেরা ভূমিকা রেখেছিল তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন।


এসএটিভির অ্যাসাইনমেন্ট ইডিটর বলেন, সাংবাদিকেরা কীভাবে সংবাদ সম্মেলনে তেলবাজি করেছে তা আমার দেখেছি। বর্তমানে মিডিয়াকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।